অন্ত্রপ্রদাহ (Intestinal Inflammation) বা অন্ত্র আবরণীর প্রদাহ (Enteritis) হল অন্ত্রের স্তরের প্রদাহ, যা অন্ত্রের ভিতরের আবরণকে আক্রমণ করে এবং হজম প্রক্রিয়ায় সমস্যা সৃষ্টি করে। এটি সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য কারণে হতে পারে, এবং এটি ছোট বা বড় অন্ত্রের মধ্যে হতে পারে।
অন্ত্রপ্রদাহের কারণ:
- ভাইরাস সংক্রমণ: ভাইরাস যেমন নোরোভাইরাস, রোটাভাইরাস, বা সাইটোমেগালো ভাইরাস অন্ত্রের প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
- ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ: সালমোনেলা, ইকোলি, শিগেলা বা ক্যাম্পাইলোব্যাক্টার জীবাণু গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে।
- অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার: অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণে ভালো ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে যায় এবং এটি অন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে।
- পূর্ববর্তী অসুস্থতা: যেমন ক্রনিক ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ (IBD), যেখানে ক্রোনস ডিজিজ বা আলসারেটিভ কোলাইটিস অন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ তৈরি করে।
- অ্যালার্জি বা অটোইমিউন রোগ: কিছু লোকের জন্য খাদ্য সংবেদনশীলতা বা অ্যালার্জি অন্ত্রের প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
- অস্বাস্থ্যকর খাবার: অপুষ্টি বা বিষাক্ত খাবার খাওয়ার কারণে অন্ত্রে প্রদাহ হতে পারে।
লক্ষণ:
- পেটের ব্যথা বা অস্বস্তি: অন্ত্রের প্রদাহের কারণে পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে।
- ডায়রিয়া: মল তরল বা প্রচুর পরিমাণে হতে পারে, কখনও কখনও রক্তযুক্ত হতে পারে।
- বমি বা বমি বমি ভাব: ক্ষুধামন্দা এবং বমি হতে পারে।
- বাঁ দিকে বা নীচে পেটের চাপ বা ফুলে যাওয়া: অন্ত্রের প্রদাহ পেটে অস্বস্তি এবং ফোলাভাব সৃষ্টি করতে পারে।
- জ্বর: প্রদাহজনিত সংক্রমণের কারণে জ্বর থাকতে পারে।
- শক্তি হ্রাস: দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ শরীরকে দুর্বল করে দিতে পারে।
প্রতিকার:
- অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা: যদি প্রদাহের কারণ ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস সংক্রমণ হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিভাইরাল গ্রহণ করা যেতে পারে।
- পানি ও লবণ পুনরুদ্ধার: ডায়রিয়া বা বমির কারণে শরীর থেকে জল এবং লবণ বের হয়ে যেতে পারে, তাই পর্যাপ্ত পানি ও ইলেকট্রোলাইট গ্রহণ করা জরুরি।
- বিশ্রাম: শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধারের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।
- ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার: পেঁপে, শাকসবজি, ফলমূল ও শস্য জাতীয় খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন।
- প্রাকৃতিক উপাদান: আদা, নিম বা মধু খান যা অন্ত্রের প্রদাহ কমাতে সহায়ক।
- চিকিৎসকের পরামর্শ: যদি প্রদাহ দীর্ঘস্থায়ী হয় বা গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
এই সমস্যার সঙ্গে কোনও জটিলতা তৈরি হলে, সঠিক সময়ে চিকিৎসা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।