অনিয়মিত ঋতুস্রাব কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

অনিয়মিত ঋতুস্রাব (Irregular Menstruation) বলতে বোঝানো হয়, যখন একজন মহিলার ঋতুচক্র (menstrual cycle) নিয়মিত নয় এবং তার ঋতুস্রাব সময়, পরিমাণ বা তীব্রতা পরিবর্তিত হয়। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে ঋতুস্রাব নির্দিষ্ট সময়ের পর পর হয় না বা দীর্ঘ সময় বিরতি থাকে।

অনিয়মিত ঋতুস্রাবের কারণ:

অনিয়মিত ঋতুস্রাবের বেশ কিছু কারণ হতে পারে, যেমন:

1. হরমোনের পরিবর্তন: পিত্তথলী, থাইরয়েড বা অন্যান্য হরমোনের পরিবর্তন, যেমন পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS)।
2. মানসিক চাপ (Stress): অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা ঋতুচক্রে পরিবর্তন আনতে পারে।
3. অতিরিক্ত ওজন বা কম ওজন: শরীরের ওজনের পরিবর্তনও ঋতুচক্রে প্রভাব ফেলতে পারে।
4. থাইরয়েড সমস্যা: হাইপোথাইরয়ডিজম বা হাইপারথাইরয়ডিজম থাইরয়েড গ্রন্থির অস্বাভাবিক কার্যকলাপের কারণে ঋতুস্রাব অনিয়মিত হতে পারে।
5. গর্ভনিরোধক পিল বা অন্যান্য ঔষধ: কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও ঋতুস্রাব অনিয়মিত হতে পারে।
6. বয়স: প্রাথমিক বা পরবর্তী বয়সে (যেমন প্রি-মেনোপজ এবং মেনোপজের আগে) ঋতুচক্রের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
7. প্রসব বা গর্ভপাত: গর্ভাবস্থা শেষ হলে ঋতুচক্রের পুনঃস্থাপন হতে সময় নিতে পারে।
8. পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS): এই অবস্থায় ওভারি (ডিম্বাশয়) থেকে সঠিকভাবে ডিম্বাণু মুক্ত হয় না এবং হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, ফলে ঋতুস্রাব অনিয়মিত হয়ে থাকে।
9. মাঝারি বা গুরুতর শারীরিক অসুস্থতা: রোগের কারণে যেমন, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি।

অনিয়মিত ঋতুস্রাবের লক্ষণ:

1. ঋতুস্রাবের সময়ের অস্বাভাবিকতা: ঋতুস্রাব খুব তাড়াতাড়ি বা দীর্ঘ সময় পর পর হতে পারে।
2. প্রাচুর্য বা অল্প পরিমাণে ঋতুস্রাব: ঋতুস্রাব খুব ভারী বা খুব হালকা হতে পারে।
3. মাসিকের মধ্যে অকাল রক্তক্ষরণ: মাঝে মাঝে রক্তক্ষরণ হতে পারে, যা স্বাভাবিক ঋতুস্রাবের বাইরেও ঘটতে পারে।
4. ব্যথা: পেট বা তলপেটের তীব্র ব্যথা হতে পারে।
5. কোনো শারীরিক বা মানসিক পরিবর্তন: যেমন হরমোনের কারণে মেজাজের পরিবর্তন, স্নায়ুজনিত সমস্যা ইত্যাদি।

প্রতিকার:

1. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত পানি, শারীরিক ব্যায়াম এবং সঠিক ঘুম ঋতুচক্রের নিয়মিত করতে সহায়ক।
2. মানসিক চাপ কমানো: মেডিটেশন, ইয়োগা, বা অন্য কোনো রিল্যাক্সেশন টেকনিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
3. ঔষধ: চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনীয় ঔষধ যেমন হরমোন থেরাপি, থাইরয়েডের চিকিৎসা, অথবা পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS)-এর চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে।
4. বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: যদি সমস্যা গুরুতর হয়, তবে একজন গাইনোকোলজিস্ট বা অন্য শারীরিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

অনিয়মিত ঋতুস্রাব সাধারণত কোনো বড় রোগের লক্ষণ নাও হতে পারে, তবে দীর্ঘদিন ধরে যদি এই সমস্যা চলে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

Top of Form

Bottom of Form