অজ্ঞান হওয়া (Fainting or Syncope) হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে মানুষের মস্তিষ্কে সাময়িক রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়ার কারণে সে সচেতনতা হারিয়ে ফেলে এবং অচেতন হয়ে পড়ে। অজ্ঞান হওয়া সাধারণত ক্ষণস্থায়ী হয়ে থাকে, কিন্তু এটি কখনো কখনো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।
অজ্ঞান হওয়ার কারণ:
- রক্তচাপের নিম্নমাত্রা (Low Blood Pressure): রক্তচাপ হঠাৎ কমে গেলে মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত রক্ত পৌঁছায় না, যার ফলে অজ্ঞান হতে পারে।
- হৃদরোগ: হার্টের সমস্যা, যেমন অস্বাভাবিক হার্টবিট (আলাদা পেশী সংকোচন বা arrhythmia), হার্টের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সমস্যা (যেমন ব্লক) ইত্যাদি কারণে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হতে পারে, যা অজ্ঞান হওয়ার কারণ।
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা উদ্বেগ: মানসিক বা শারীরিক চাপের কারণে হরমোনের পরিবর্তন ঘটতে পারে, যার ফলে রক্তচাপ কমে গিয়ে অজ্ঞান হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
- দীর্ঘ সময় এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা: দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলে রক্ত পুরো শরীরে সঠিকভাবে সঞ্চালিত হতে পারে না, যার ফলে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে।
- তীব্র ব্যথা বা আঘাত: অদ্ভুত বা তীব্র শারীরিক ব্যথার কারণে মস্তিষ্ক রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত করে এবং অজ্ঞান হতে পারে।
- অল্প পুষ্টির অভাব: খাবারের অভাবে, বিশেষ করে গ্লুকোজের অভাবে, রক্তে শর্করা কমে গেলে মস্তিষ্কে শক্তির অভাব দেখা দেয় এবং অজ্ঞান হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
- ডিহাইড্রেশন (Dehydration): শরীরের জলশূন্যতার কারণে রক্তের চাপ কমে যায় এবং অজ্ঞান হওয়ার ঘটনা ঘটে।
- অ্যালকোহল বা মাদকের প্রভাব: মদ্যপান বা অন্য কোনো মাদক সেবন করার পর মস্তিষ্কের কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে অজ্ঞান হওয়া সম্ভব।
- গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় কিছু শারীরিক পরিবর্তনের কারণে অজ্ঞান হওয়া হতে পারে, বিশেষত যদি মায়ের রক্তচাপ কমে যায়।
- রক্তস্বল্পতা (এনিমিয়া): রক্তে হিমোগ্লোবিনের অভাব হলে অক্সিজেনের পর্যাপ্ত সরবরাহ না পাওয়ার কারণে মস্তিষ্কে অক্সিজেন কমে যেতে পারে।
অজ্ঞান হওয়ার লক্ষণ:
- হালকা মাথা ঘোরা।
- মাথাব্যথা বা ঘোরাঘুরি অনুভূতি।
- শক্তি হারানো বা অস্থিরতা।
- শ্বাস–প্রশ্বাসে সমস্যা।
- ব্রেইনের ফাঁকা অনুভূতি।
- পায়ের নিচে শক্তির অভাব বা শরীরের ভারসাম্য হারানো।
- চোখের সামনে অন্ধকার বা ঝাপসা দেখা।
- হৃদস্পন্দন দ্রুত হওয়া বা অনুভব করা।
অজ্ঞান হওয়ার প্রতিকার:
- অজ্ঞান হওয়ার আগে সতর্কতা: যদি মাথা ঘোরানো বা অস্বস্তি অনুভব করেন, তবে দ্রুত একটি নিরাপদ স্থানে বসে পড়ুন বা শুয়ে পড়ুন। পা দুটো উঁচু করে দিন (এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে)।
- বিশ্রাম নেওয়া: যদি অজ্ঞান হয়ে পড়েন, তবে কিছু সময়ের জন্য শুয়ে থাকুন এবং ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ান।
- পানি পান: শরীরের পানির অভাব হলে ডিহাইড্রেশনও অজ্ঞান হওয়ার কারণ হতে পারে, তাই পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত।
- খাবার খাওয়া: যদি পুষ্টির অভাব বা গ্লুকোজের অভাব হয়ে থাকে, তবে দ্রুত কিছু হালকা খাবার যেমন ফল, চকোলেট বা লবণাক্ত খাবার খাওয়া যেতে পারে।
- অভ্যন্তরীণ সমস্যা চিহ্নিত করা: যদি হৃদরোগ বা রক্তচাপের সমস্যার কারণে অজ্ঞান হয়ে থাকেন, তবে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করান। চিকিৎসক প্রয়োজনীয় ওষুধ বা চিকিৎসা পরামর্শ দিতে পারেন।
- প্রথম সাহায্য: যদি কেউ অজ্ঞান হয়ে পড়ে, তবে তাকে শোয়ানো উচিত এবং মাথা নিচু করে রাখা উচিত যাতে রক্তের প্রবাহ মাথার দিকে ফিরে আসে। দ্রুত জরুরি সেবা ডাকাও প্রয়োজন হতে পারে।
- মানসিক চাপ কমানো: মানসিক চাপ বা উদ্বেগজনিত অজ্ঞান হওয়ার সমস্যা কমাতে, নিয়মিত মেডিটেশন, শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম করতে পারেন।
যখন চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন:
- যদি অজ্ঞান হওয়া বারবার ঘটতে থাকে।
- যদি অজ্ঞান হওয়ার সঙ্গে হার্টবিট অস্বাভাবিক হয়।
- যদি অজ্ঞান হওয়ার পরে দীর্ঘ সময় পুনরায় জ্ঞান ফিরে না আসে।
- যদি অজ্ঞান হওয়ার সঙ্গে শরীরে অন্যান্য গুরুতর লক্ষণ (যেমন বুকের ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বা পক্ষাঘাত) থাকে।
অজ্ঞান হওয়া সাধারণত ক্ষণস্থায়ী হলেও যদি এটি একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হয়ে থাকে, তবে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।